Skip to main content
 

আমাদের কথা

প্রাচীন ঐতিহ্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক ঐশ্বর্যমন্ডিত বরেন্দ্রভূমি সংলগ্ন নাটোর জেলা ভারতবর্ষের ইতিহাসের পাশাপাশি কবির কাব্যেও ভাস্বর হয়ে আছে। জীবনানন্দ দাসের বনলতা সেন বা রসনাবিলাসের কাঁচা গোল্লার নাম উচ্চারণের সাথে সাথে যার কথা মানসপটে ভেসে ওঠে সে হল ’নাটোর’। আধুনিক কালের এই শহরটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এক অধ্যায়। মোঘল শাসন আমলের শেষ সময় থেকে বাংলার ক্ষমতার অন্যতম প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয় নাটোর। বিশেষ করে নবাবী আমলে এর ব্যপক ব্যাপ্তী ঘটে। বাংলার সুবেদার মুর্শিদকুলি খানের (শাসনকাল: ১৭০১-১৭২৭) প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে বরেন্দ্রী ব্রাক্ষ্মণ রঘুনন্দন তার ছোট ভাই রামজীবনের নামে এতদ অঞ্চলে জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেন। ১৭১০ সালে রাজা রামজীবন রায় এই স্থানে মাটি ভরাট করে তার রাজধানী স্থাপন করেন। কালক্রমে মন্দির, প্রাসাদ, দীঘি, উদ্যান ও মনোরম অট্টালিকা দ্বারা সুসজ্জিত নগরে পরিণত এটি। নাটোর রাজ্য উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে রাজা রামজীবনের দত্তক পুত্র রামকান্তের স্ত্রী রাণী ভবানীর রাজত্বকালে। শাসন ব্যবস্থার সুবিধার জন্য সুবেদার মুর্শিদ কুলি খান বাংলাকে যখন ১৩টি চাকলায় বিভক্ত করেছিলেন, তখন এর মধ্যে রাণী ভবানীর জমিদারীই ছিল ৮ চাকলা বিস্তৃত। দীর্ঘ ১৬৫ বছর অর্থাৎ ইংরেজ, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের চৌদ্দ বছরের প্রশাসনিক ইতিহাসে নাটোর মোহকুমা সদর হিসাবে পরিচিত ছিল। রাণী ভবানী তার নায়েব দয়ারামের উপর সন্তুষ্ট হয়ে দিঘাপতিয়া পরগনা তাকে উপহার দেন। এই দিঘাপতিয়াতেই অবস্থিত নাটোর জেলার সবচেয়ে জৌলসপূর্ণ স্থাপত্যকীর্তী ‘উত্তরা গণভবন’। দয়ারামের পরবর্তী বংশধর রাজা প্রমাদনাথের সময় গ্রীক স্থাপত্যকলার অনুসরনে রূপকথার রাজপ্রাসাদে উন্নীত হয় এটি। কালক্রমে এই রাজ প্রাসাদটি প্রথমত গভর্ণর হাউস, পরবর্তীতে বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের পরে উত্তরা গণভবনে পরিনত হয়। ১৯৮৪ সালে নাটোর জেলা সদরের মর্যাদা লাভ করে।

১৯৮৪ সালে জেলা সদরে উন্নীত হওয়ার সাথে সাথে এক দিকে যেমন নাটোরের  অবস্থানগত মূল্য বৃদ্ধি পায়, অন্য দিকে জেলা হিসেবে এর প্রসাশনিক কাঠামো আরো মজবুত হয়। ১৯৮৪ সালের ৬ আগষ্ট জারীকৃত S.R.O.380-L/84/546-JIV/5C-1/84 নং স্মারকমূলে নাটোর জেলা ও দায়রা জজ আদালত সৃজন করা হয়। ১ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৪ তারিখে জনাব মোঃ হামিদুল হক সর্বপ্রথম জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তৎপরবর্তীতে কালের পরিক্রমায় ১৬ জন বিচারক নাটোর বিচারাঙ্গনের অভিভাবক হিসেবে এই পদ অলংকৃত করেছেন। ১৭ তম জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে মাননীয় বিচারক, জনাব মোঃ শরীফ উদ্দীন জেলার গুরুত্বপূর্ণ এ পদটির শোভা বর্ধন করছেন।।

২০০৭ সালের ১ নভেম্বর মাসদার হোসেন বনাম বাংলাদেশ সরকার মামলায় সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের যুগান্তকারী রায়ের ফসল হিসেবে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথকীকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। তারই প্রেক্ষাপটে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিচার শাখা-৪ হতে ১৩-০৯-২০০৭ খ্রি: তারিখের ৪৫১ নং স্মারকমূলে জারীকৃত প্রজ্ঞাপন দ্বারা মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ কর্তৃক সিভিল আপীল ৭৯/১৯৯৯, তৎসহ কনটেম্প্ট পিটিশন নং- ৭/২০০৪ এ বিগত ৪ মে, ২০০৭ তারিখে প্রদত্ত আদেশ বাস্তবায়নের নিমিত্তে নাটোর সহ তৎকালীন ৬৪টি জেলায় ৬৪টি চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সৃজিত হয়। ২০০৭ সালের ২৫ নভেম্বর জনাব মোহাম্মদ শরীফ উদ্দীন সর্ব প্রথম এই পদে আসীন হন। বর্তমানে ষষ্ঠ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্বে আছেন মাননীয় বিচারক, জনাব মোঃ আনোয়ারুল হক।

নাটোর সদর, সিংড়া, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, লালপুর, বাগাতিপাড়া ও নলডাঙা এই সাতটি উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত এই জেলায় প্রতিটি উপজেলার জন্য পৃথক সিনিয়র সহকারী/ সহকারী জজ আদালত থাকলেও সর্বশেষে  ‍সৃজিত নলডাঙা উপজেলা এখনো সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের এখতিয়ারাধীন। এছাড়াও রয়েছে একটি পারিবারিক আদালত, দুইটি যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত, তিনটি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং একটি জেলা ও দায়রা জজ আদালত। চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৭ টি আমলী আদালতের পাশাপাশি রয়েছে ৪টি জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, ৩টি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, একটি অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও একটি চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সমূহের মধ্যে রয়েছে একটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। নাটোর জেলার ন্যায় বিচারের মানদন্ড সর্বদা সমুন্নত রাখতে আদালতসমূহ সদা তৎপর।